অবশেষে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর প্ররোচনায় কেবলমাত্র সাংসারিক অচলাবস্থা দূর করিতে দ্বিতীয় বার বিবাহ করিয়া রমনী বিহীন নিরর্থক জীবনটাকে অর্থময় করিয়া তুলিতে রাজি হইল নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী।
তাহাতে পাড়ার কেহ কেহ আড়ালে মুখ টিপিয়া হাসিত। ঠাট্টাছলে দুইকথা শোনাইতে দ্বিধা করিত না। আত্মীয়স্বজনেরা কেহ কেহ মানিয়া নিতে না পারিলেও সামনা-সামনি কিছু বলিবার সাহস পাইল না।
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হইয়া গেল। দ্বিতীয় দার গ্রহনের পর আজ নীহারকে আনমনে ভাবনায় পাইয়া বসিল। মীরাকে ভালো বাসিতে পারিবে না বলিয়া যে সকল রুক্ষতা তাহার মধ্যে গাঁথিয়া বসিয়াছিল সেইসব কথা এখন তাহাকে বড়ো লজ্জায় ফেলিয়া দেয়। যাহাকে ভালোবাসিয়া জীবন সঙ্গিনী করিয়াছিল তাহার চাইতে মীরার ভালোবাসা, অবদান কোন অংশেই কম নহে। বরং অনেকটাই বেশি। তাহার ঋণ এইজীবনে শোধ করিবার নহে।
সুলতা শুধু নীহারকে চাহিয়াছিল এবং সকলকে তাহার নিকট হইতে সরাইয়া দিয়া একার রাজত্ব সৃষ্টি করিয়াছিল। মীরা আসিয়া সকলকে একসুত্রে বাঁধিয়া দিল।
স্বাস্থ্য পরিদপ্তরে চাকরি করা কালীন সময়ে বটতলায় বদলীর বদৌলতে বন্ধু আশিকের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে সুলতার সাথে নীহারের। টানা টানা চোখের ঈশারায়, হাসিমাখা চাপা ঠোঁটের কিঞ্চিৎ বাক্যব্যয়ে প্রথম দর্শণেই নীহার সুলতাকে ভীষণ রকম ভালোবাসিয়া ফেলিল৷
সুলতার বাবা সুশীল চন্দ্র সেন বটতলা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক হইলেও সংসার নামক মধুকুঞ্জে নিতান্তই ওই স্কুলের মাথানিচু পিয়নটির মতো। স্ত্রীর গর্ভে
তিন চারটে ছেলে মেয়ের জন্মদিয়ে তাহাদের মানুষ করিবার দায়ভার মাথায় তুলিয়া লইয়াছেন।
তাহাতে পাড়ার কেহ কেহ আড়ালে মুখ টিপিয়া হাসিত। ঠাট্টাছলে দুইকথা শোনাইতে দ্বিধা করিত না। আত্মীয়স্বজনেরা কেহ কেহ মানিয়া নিতে না পারিলেও সামনা-সামনি কিছু বলিবার সাহস পাইল না।
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হইয়া গেল। দ্বিতীয় দার গ্রহনের পর আজ নীহারকে আনমনে ভাবনায় পাইয়া বসিল। মীরাকে ভালো বাসিতে পারিবে না বলিয়া যে সকল রুক্ষতা তাহার মধ্যে গাঁথিয়া বসিয়াছিল সেইসব কথা এখন তাহাকে বড়ো লজ্জায় ফেলিয়া দেয়। যাহাকে ভালোবাসিয়া জীবন সঙ্গিনী করিয়াছিল তাহার চাইতে মীরার ভালোবাসা, অবদান কোন অংশেই কম নহে। বরং অনেকটাই বেশি। তাহার ঋণ এইজীবনে শোধ করিবার নহে।
সুলতা শুধু নীহারকে চাহিয়াছিল এবং সকলকে তাহার নিকট হইতে সরাইয়া দিয়া একার রাজত্ব সৃষ্টি করিয়াছিল। মীরা আসিয়া সকলকে একসুত্রে বাঁধিয়া দিল।
স্বাস্থ্য পরিদপ্তরে চাকরি করা কালীন সময়ে বটতলায় বদলীর বদৌলতে বন্ধু আশিকের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে সুলতার সাথে নীহারের। টানা টানা চোখের ঈশারায়, হাসিমাখা চাপা ঠোঁটের কিঞ্চিৎ বাক্যব্যয়ে প্রথম দর্শণেই নীহার সুলতাকে ভীষণ রকম ভালোবাসিয়া ফেলিল৷
সুলতার বাবা সুশীল চন্দ্র সেন বটতলা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক হইলেও সংসার নামক মধুকুঞ্জে নিতান্তই ওই স্কুলের মাথানিচু পিয়নটির মতো। স্ত্রীর গর্ভে
তিন চারটে ছেলে মেয়ের জন্মদিয়ে তাহাদের মানুষ করিবার দায়ভার মাথায় তুলিয়া লইয়াছেন।
অপরদিকে নীহারের বাবা মারা গিয়াছেন নীহারের বারো বছর বয়সের সময়। সঞ্চয় কিছু রাখিয়া যাইতে পারিলেন না। ব্যবসাপাতি যাহা কিছু ছিল যুদ্ধে সমুলে বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। একমাত্র নীহারের উপার্জনেই পাঁচ ভাইবোনের খাওয়া পড়া চলে। নিতান্ত গরীব অবস্থা হইতে উঠিয়া দাঁড়াইয়াছে নীহার।
এমত অবস্থায় লুকাইয়া চুরাইয়া দুই বৎসর যাবৎ প্রেমের উত্তাল দরিয়ায় হাবুডুবু খাইতেছে নীহার এবং সুলতা। আকাশে চাঁদ উঠিলে মেঘের আড়ালে অবস্থান করিলেও চাঁদের উপস্থিতি যেমন লুকাইয়া রাখিবার নহে তেমনি তাহাদের হৃদয়ের আলো চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িল। তাহাতে বাদ সাধিলেন সুলতার মা অপর্না দেবী। নীহারকে তাহাদের বাড়ির আঙিনায় পা রাখতে নিষেধ করিয়াই শুধু ক্ষান্ত হইলেন না, সুলতাকেও বাড়ির বাহিরে পা রাখিতে নিষেধ করিয়া মুঠোফোন টিকে নিজের কাছে রাখিয়া উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ নিশ্চিহ্ন করিয়া তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন। ইহাতে তাহাদের মধ্যে যোগাযোগ খানিকটা কমিল বটে,কিন্তু তাহারা দমিল না।
খাঁচার পাখির মতো ডানা ঝাপ্টাইতে ঝাপ্টাইতে পালক খসাইয়া সুলতা অসুস্থ হইয়া পড়িল। ডাক্তার আসিল,তেমন কিছু নহে বলিয়া কিছু ভিটামিন ঔষধপত্র লিখিয়া মেয়ের বায়ু পরিবর্তন করিবার কথা বলিয়া চলিয়া গেলেন। ইতিমধ্যে নীহার পাগল হইয়া বন্ধু আশিকের শরণাপন্ন হইল এবং তাহার মাধ্যমেই চিঠির আদান প্রদান করিতে লাগিল।
চিঠিতে শব্দের পুরিয়া সেবন করিয়া সুলতা মোটামুটি সুস্থ হইয়া উঠিল বটে, কিন্তু মায়ের ভাবনা চিন্তা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিল না।
কয়েকদিন পর অপর্না দেবী সুলতাকে বলিলেন , আগামীকাল পাত্রপক্ষ আসিতেছে তোমাকে দেখার জন্য তুমি ঠিকঠাক মতো তৈরী থাকিবে। বলিয়া রাখি, পাত্র তোমার অপছন্দ হইবে না তোমার পূর্ব পরিচিত ডাক্তার দীপক সেন। তাহারা আগামীকালই পাটিবস্ত্র করিয়া যাইবেন। বলিয়া সুলতার ঘরের দরজা ভেজাইয়া চলিয়া গেলেন। মনের আনন্দে অপর্না সেন ঢাকঢোল পিটাইয়া পাত্রী দেখার অনুষ্ঠানের আয়োজন করিল।
উপায় অন্তর না দেখিয়া মনে প্রচন্ড সাহস লইয়া নীহার সুলতার বাবা সুশীল চন্দ্র সেনের স্কুলে গিয়া তাঁহার কাছে নিজের বিবাহের প্রস্তাব রাখিল এবং বলিল " মেসোমশাই আপনি তো সবকিছু জানেন,সুলতা বলিয়াছে অবশ্যই। আপনি হয়তো ভাবিতেছেন আমি কেন আসিলাম। বলিতে দ্বিধা নাই যে আমার গার্জিয়ান আমি নিজেই। মা আসিতে পারিতেন কিন্তু মায়ের শরীর ভালো নহে। "
উত্তরে মেসোমশাই বলিলেন,ঠিক আছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাক তোমাদের চারহাত মিলাইবার দায়িত্ব আমি নিজেই গ্রহন করিলাম। যদিও তাহা আমার জন্য একরকম ভয়ংকর যুদ্ধ যাত্রার সামিল হইবে। তথাপি তোমাদের মন চাহিয়া আমি সিদ্ধান্ত নিলাম।
নীহার ভাবি শ্বশুরকে প্রণাম করিয়া বিশ্ব জয় করার মতো প্রসন্ন চিত্তে স্কুল প্রাঙ্গন ত্যাগ করিল।
নীহারের পারিবারিক দিক দিয়া এই বিবাহে কোন বাধা রহিল না, তবে মায়ের একান্ত স্থির সিদ্ধান্ত বড়ো বোনের বিবাহ না দিয়া ছেলের বিবাহ দিবেন না। দৈব কৃপায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দুই ভাই বোনের বিবাহ সম্পন্ন হইল।
নুন আনিতে পান্তা ফুরোনো অভাবের সংসারে সুখে দুখে ভালোবাসায় তাহারা সংসার করিতে লাগিল। ছেলে- মেয়ে হইল। সংসারে অভাব বাড়িয়া গেল। ফলে সুলতা একটা স্কুলে চাকুরী যোগার করিয়া লইল। নীহারই সমস্ত কাগজপত্র গুছাইয়া সাবমিট করিয়া দিল। সুলতা গিয়া শুধু জয়েন করিল।
ভগবান মানুষের সকল আশা পূরণ করিলেও কোন না কোন দিক হইতে তাহাদের কে চরম অপূর্ণতায় মানসিকভাবে সাগরের তলদেশে নিমজ্জিত করিয়া রাখেন। এইখান হইতেই তাহাকে ডাকিবার কিংবা তাহাকে মনে রাখিবার বন্দোবস্ত করিয়া কৃতকর্মের ফলাফল লিখিয়া রাখেন।
চিঠিতে শব্দের পুরিয়া সেবন করিয়া সুলতা মোটামুটি সুস্থ হইয়া উঠিল বটে, কিন্তু মায়ের ভাবনা চিন্তা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিল না।
কয়েকদিন পর অপর্না দেবী সুলতাকে বলিলেন , আগামীকাল পাত্রপক্ষ আসিতেছে তোমাকে দেখার জন্য তুমি ঠিকঠাক মতো তৈরী থাকিবে। বলিয়া রাখি, পাত্র তোমার অপছন্দ হইবে না তোমার পূর্ব পরিচিত ডাক্তার দীপক সেন। তাহারা আগামীকালই পাটিবস্ত্র করিয়া যাইবেন। বলিয়া সুলতার ঘরের দরজা ভেজাইয়া চলিয়া গেলেন। মনের আনন্দে অপর্না সেন ঢাকঢোল পিটাইয়া পাত্রী দেখার অনুষ্ঠানের আয়োজন করিল।
উপায় অন্তর না দেখিয়া মনে প্রচন্ড সাহস লইয়া নীহার সুলতার বাবা সুশীল চন্দ্র সেনের স্কুলে গিয়া তাঁহার কাছে নিজের বিবাহের প্রস্তাব রাখিল এবং বলিল " মেসোমশাই আপনি তো সবকিছু জানেন,সুলতা বলিয়াছে অবশ্যই। আপনি হয়তো ভাবিতেছেন আমি কেন আসিলাম। বলিতে দ্বিধা নাই যে আমার গার্জিয়ান আমি নিজেই। মা আসিতে পারিতেন কিন্তু মায়ের শরীর ভালো নহে। "
উত্তরে মেসোমশাই বলিলেন,ঠিক আছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাক তোমাদের চারহাত মিলাইবার দায়িত্ব আমি নিজেই গ্রহন করিলাম। যদিও তাহা আমার জন্য একরকম ভয়ংকর যুদ্ধ যাত্রার সামিল হইবে। তথাপি তোমাদের মন চাহিয়া আমি সিদ্ধান্ত নিলাম।
নীহার ভাবি শ্বশুরকে প্রণাম করিয়া বিশ্ব জয় করার মতো প্রসন্ন চিত্তে স্কুল প্রাঙ্গন ত্যাগ করিল।
নীহারের পারিবারিক দিক দিয়া এই বিবাহে কোন বাধা রহিল না, তবে মায়ের একান্ত স্থির সিদ্ধান্ত বড়ো বোনের বিবাহ না দিয়া ছেলের বিবাহ দিবেন না। দৈব কৃপায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দুই ভাই বোনের বিবাহ সম্পন্ন হইল।
নুন আনিতে পান্তা ফুরোনো অভাবের সংসারে সুখে দুখে ভালোবাসায় তাহারা সংসার করিতে লাগিল। ছেলে- মেয়ে হইল। সংসারে অভাব বাড়িয়া গেল। ফলে সুলতা একটা স্কুলে চাকুরী যোগার করিয়া লইল। নীহারই সমস্ত কাগজপত্র গুছাইয়া সাবমিট করিয়া দিল। সুলতা গিয়া শুধু জয়েন করিল।
ভগবান মানুষের সকল আশা পূরণ করিলেও কোন না কোন দিক হইতে তাহাদের কে চরম অপূর্ণতায় মানসিকভাবে সাগরের তলদেশে নিমজ্জিত করিয়া রাখেন। এইখান হইতেই তাহাকে ডাকিবার কিংবা তাহাকে মনে রাখিবার বন্দোবস্ত করিয়া কৃতকর্মের ফলাফল লিখিয়া রাখেন।
নীহারের পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরিয়া আসিলেও মানষিক শান্তি চলিয়া গেল। সুলতার সাথে বিশ বছরের সংসার জীবনের মধ্যে কাটিয়া ছাটিয়া পাঁচ বছর ভালোভাবে কাটিয়াছে কি না সন্দেহ। বাকি সময় জুড়ে শুধু মনোমালিন্য, ঝগড়া আর যন্ত্রণাময় দিনাতিপাত বই আর কিছু ছিল না।
এইসমস্ত গুরুম-গারুম মেঘ গর্জনের মধ্য দিয়াই অত্যন্ত গৌরবের সাথে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিল। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ন হইল। সুলতার অত্যধিক সচেতনতার ফলে ছেলেটি মেয়েটি লেখাপড়ায় সেরা স্থান অর্জন করিল।
এইসমস্ত গুরুম-গারুম মেঘ গর্জনের মধ্য দিয়াই অত্যন্ত গৌরবের সাথে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিল। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ন হইল। সুলতার অত্যধিক সচেতনতার ফলে ছেলেটি মেয়েটি লেখাপড়ায় সেরা স্থান অর্জন করিল।
এর পরের যাহা ঘটিল তাহাতে দিবসের উজ্জল আলোকরাশি যেনো হঠাৎ করিয়া ঝড়ো বাতাসে ধপ করিয়া নিভিয়া গেল। নীহার কে পুত্র কন্যা সমেত অকুল সমুদ্রে ভাসাইয়া দিয়া সুলতা হার্টঅ্যাটাকে চির নিদ্রায় শায়িত হইল। শোকাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল পরিবারটি।
সদা গতিময় আসা যাওয়ার রিলে দৌড়ে কাউকে না কাউকে অন্তর্যামী আগে হইতেই প্রস্তুত করিয়া রাখেন। মানুষকে শুধু সাময়িক ভাঙিয়া চুরিয়া আরো বেশি কিছু সহিবার এবং ভুলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইবার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়া থাকেন। নীহারও প্রেয়সীর বিরহে সবকিছু ভাসাইয়া দিয়া শোকগ্রস্ত হইয়া পড়িয়া রহিল না। সন্তানের মুখের দিকে চাহিয়া সমস্ত কিছু ভুলিয়া রহিবার শক্তি যোগার করিয়া লইল।
আপনার প্রাঞ্জল লেখনী আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। অন্যমনে সাহিত্য আপনাকে শুভেচ্ছা জানায়।
উত্তরমুছুন